বর্ষবরণে করোনার নয়া সঞ্জীবনী, প্লাজমা থেরাপি চালু হচ্ছে কলকাতায়

বর্ষবরণে করোনার নয়া সঞ্জীবনী, প্লাজমা থেরাপি চালু হচ্ছে কলকাতায়
News

বর্ষবরণে করোনার নয়া সঞ্জীবনী, প্লাজমা থেরাপি চালু হচ্ছে কলকাতায়


গৌতম ব্রহ্ম: প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। চলতি মাসেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে শুরু হয়ে যাবে প্লাজমা থেরাপির ‘ট্রায়াল রান।’

আপাতত ঠিক হয়েছে, ৮০ জন কোভিড পজিটিভ রোগীর উপর এই পরীক্ষামূলক চিকিৎসা প্রক্রিয়া চলবে। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। পশ্চিমবঙ্গে ‘অ্যাক্টিভ’ কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা কম। এবং তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। তাই এক লপ্তে ৮০ জন রোগী পাওয়া মুশকিল। সেক্ষেত্রে ‘স্যাম্পল সাইজ’ অর্ধেক করা হতে পারে। অর্থাৎ, চল্লিশজন রোগীকে দু’টি ভাগে ভাগ করে থেরাপির প্রয়োগ হবে। 

এবং স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের দুই চিকিৎসক ডা. বিভূতি সাহা ও ডা. যোগীরাজ রায় এবং আইসিএমআরের ডা. দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে এই থেরাপি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. অভিজিৎ চৌধুরি। তিনিই প্রথম করোনা চিকিৎসায় এই ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’র পক্ষে সওয়াল করেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ সংকেত দেন।

উল্লেখ্য, প্লাজমা থেরাপির জন্য রক্তদানের ইচ্ছা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন একাধিক করোনাজয়ী। সুতরাং প্লাজমা জোগাড় করাটা সমস্যা হবে না। 

দরকার শুধু তিনটি অনুমোদন। স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক সোমবার জানালেন, প্রথমে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে প্রস্তাব জমা পড়বে আইসিএমআরের এথিক্যাল কমিটিতে। তারা ছাড়পত্র দিলে প্রস্তাবপত্র যাবে বিজ্ঞান ও গবেষণা সংক্রান্ত দেশের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিএমআরে। চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিজিসিআই)।

এক চিকিৎসকের কথায়, এই ধরনের অনুমতি পেতে সময় লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতেই অনুমোদন দেওয়া হবে। 

সেক্ষেত্রে দু’তিন সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে প্লাজমা থেরাপি। পাশাপাশি কোভিডের প্রচলিত উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসাও জারি থাকবে। রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই কোভিডের কবল থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের তালিকা তৈরি হয়েছে। আইসিএমআর ও ডিজিসিআই সবুজ সংকেত দিলেই শুরু হবে সুস্থ রোগীদের থেকে রক্ত সংগ্রহের কাজ। 

হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করে তা সঙ্কটজনক কোভিড পজিটিভ রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হবে। প্লাজমায় মজুত অ্যান্টবডিই শমন হয়ে উঠবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের। বাড়িয়ে দেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

সম্প্রতি আমেরিকার হিউস্টন মেথডিস্ট হসপিটালে এক কোভিড পজিটিভ হওয়া রোগীর উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। করোনা ধরা পড়ার পর ১৪ দিন কোয়ারাইন্টাইনে থাকা এক ব্যক্তির রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে এক সঙ্কটজনক করোনা আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছিল। 

যেহেতু কোভিড চিকিৎসার কোনও সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাই প্লাজমা থেরাপিই হয়ে উঠতে পারে বড় আশির্বীদ। চিনের ইউহানেও বেশ কয়েকজন রোগীর উপর এই ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ প্রয়োগ করা হয়। 

আমেরিকা আরও বড় আকারে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করতে চলেছে। ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চ’-এ ভেন্টিলেশনে থাকা কয়েকজন করোনা আক্রান্তের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ভাবনা-চিন্তা চলছে। এবার বাংলার কোভিড রোগীরাও এই থেরাপির আশীর্বাদ পাবেন। জানা গিয়েছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল এখন মাত্র ১৪জন কোভিড পজিটিভ রোগী রয়েছেন। টালিগঞ্জের এম আর বাঙ্গুরেও পজিটিভ রোগী রয়েছেন। এই থেরাপি চালাতে নূ্ন্যতম ৪০জন রোগীর প্রয়োজন। তেমন হলে বাঙ্গুরেও চলবে ট্রায়াল। 

Next Post Previous Post